শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

বৃষ্টির জন্য কৃত্রিম পাহাড় বানাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত

এই গ্রীষ্মে বৃষ্টি , বাজ এবং শিলাবৃষ্টি পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যের মধ্য দিয়ে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিল বিজ্ঞানীদের। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও এটাই সত্য। কেননা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার মধ্যপ্রাচ্যে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি গোপন কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃত্তিমভাবে বৃষ্টি নামানোর উপর গবেষণা চালি এ সফল হয়। 

আবহাওয়া বিদরা যখন একেবারেই বৃষ্টি না হবার পূর্বাভাস দেন সেখানে ৫২ দিন জুলাই ও আগস্ট মাসে সারা অঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। 

যদিও চিত্তাকর্ষক কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে এই প্রথমবারের মত প্রকৃতিমাতার সঙ্গে জগাখিচুড়ি করার চেষ্টা করেছেন তা নয়। এবার বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে স্থায়ীভাবে বৃষ্টির জন্য কৃত্রিম পাহাড় বানাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। আর এ জন্য আরব বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটির রাজধানী দুবাইতে তৈরি হবে ‘বৃষ্টির পাহাড়’। মরুভূমির এই দেশটিতে কৃত্রিম পাহাড় সেখানে বৃষ্টিপাতে বাধ্য করবে, এমনটাই আশা নগর কর্তৃপক্ষের।

কৃত্রিম উপায়ে বাতাসের বেগ তৈরি করে মেঘের সৃষ্টি এবং সেই মেঘের কারণে বৃষ্টি হবে এমনটা আশা করেই তৈরি করা হচ্ছে এই মানুষনির্মিত পর্বত। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাটমোসফেরিক রিসার্চের (এনসিএআর) বিজ্ঞানীদের সহায়তায় দুবাই এই বড় প্রকল্পে হাত দিয়েছে। যদিও গবেষণাটি আপাতত প্রাথমিক ধাপে রয়েছে।

ব্রিটেনে দি ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়, ক্লাউড-সিডিংয়ের মাধ্যমে আবহাওয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যেন সেই বিশেষ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে।

১৯৪০ সালে আবিষ্কৃত হলেও ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিটি হালে অনেক উন্নত হয়েছে। এ পদ্ধতির মূল কাজ হলো, মেঘের জলকণাকে জোরপূর্বক সম্প্রসারণ করা হয়। এর মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আরব আমিরাতে আরো বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবুধাবির একজন বিজ্ঞানী ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্লাউড সিডিং পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে আমিরাতের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য এসব টিমের গবেষণা বাবদ ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের দলটি তাঁদের এই গবেষণার জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসেবে দুবাইকেই পছন্দ করেছেন। পাহাড়টি ঠিক কত বড় এবং চওড়া হওয়া ‍উচিত তা নিয়ে এখন চলছে চিন্তা-ভাবনা।

এই প্রকল্পের একজন বিশেষজ্ঞ রলফ ব্রুন্টেজেস দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘এমন একটি পাহাড় তৈরি করা অত সহজ কাজ নয়। আমরা এখনো বিষয়টি শেষ করতে ব্যস্ত আছি। তাই আমরা উচ্চতা, প্রশস্ততা ও জায়গা নিয়ে কাজ করছি। স্থানীয় আবহাওয়াবিদদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।’

খরচ প্রসঙ্গে রলফ বলেন, ‘প্রকল্পটি যদি সরকার মনে করে খুব বেশি ব্যয়বহুল তবে তা আর সামনে আগাতে পারবে না। কিন্তু এর ফলে সুদূর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁরা ধারণাপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরবর্তী ধাপে গেলে কাজটি করবেন প্রকৌশলীরা। তখন দেখা যাবে এটা করা আসলেই সম্ভব কি না।’ তিনি আরো বলেন মানবনির্মিত পর্বত যদি সফলভাবেই মেঘ উৎপাদনে সক্ষম হয় এবং বৃষ্টি নামায়, তাহলে বিশ্বে মরুপ্রবণ অঞ্চলের জন্য এটা মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি বিশ্বে তখন সিলভার আয়োডিনের ব্যবহার বাড়বে। কারণ বিমানে করে মেঘের মধ্যে এই পদার্থ ছড়িয়ে দিলেই বৃষ্টি ঝরবে।