শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

বৃষ্টির জন্য কৃত্রিম পাহাড় বানাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত

এই গ্রীষ্মে বৃষ্টি , বাজ এবং শিলাবৃষ্টি পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যের মধ্য দিয়ে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিল বিজ্ঞানীদের। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও এটাই সত্য। কেননা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার মধ্যপ্রাচ্যে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি গোপন কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃত্তিমভাবে বৃষ্টি নামানোর উপর গবেষণা চালি এ সফল হয়। 

আবহাওয়া বিদরা যখন একেবারেই বৃষ্টি না হবার পূর্বাভাস দেন সেখানে ৫২ দিন জুলাই ও আগস্ট মাসে সারা অঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। 

যদিও চিত্তাকর্ষক কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে এই প্রথমবারের মত প্রকৃতিমাতার সঙ্গে জগাখিচুড়ি করার চেষ্টা করেছেন তা নয়। এবার বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে স্থায়ীভাবে বৃষ্টির জন্য কৃত্রিম পাহাড় বানাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। আর এ জন্য আরব বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটির রাজধানী দুবাইতে তৈরি হবে ‘বৃষ্টির পাহাড়’। মরুভূমির এই দেশটিতে কৃত্রিম পাহাড় সেখানে বৃষ্টিপাতে বাধ্য করবে, এমনটাই আশা নগর কর্তৃপক্ষের।

কৃত্রিম উপায়ে বাতাসের বেগ তৈরি করে মেঘের সৃষ্টি এবং সেই মেঘের কারণে বৃষ্টি হবে এমনটা আশা করেই তৈরি করা হচ্ছে এই মানুষনির্মিত পর্বত। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাটমোসফেরিক রিসার্চের (এনসিএআর) বিজ্ঞানীদের সহায়তায় দুবাই এই বড় প্রকল্পে হাত দিয়েছে। যদিও গবেষণাটি আপাতত প্রাথমিক ধাপে রয়েছে।

ব্রিটেনে দি ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়, ক্লাউড-সিডিংয়ের মাধ্যমে আবহাওয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যেন সেই বিশেষ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে।

১৯৪০ সালে আবিষ্কৃত হলেও ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিটি হালে অনেক উন্নত হয়েছে। এ পদ্ধতির মূল কাজ হলো, মেঘের জলকণাকে জোরপূর্বক সম্প্রসারণ করা হয়। এর মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আরব আমিরাতে আরো বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবুধাবির একজন বিজ্ঞানী ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্লাউড সিডিং পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে আমিরাতের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য এসব টিমের গবেষণা বাবদ ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের দলটি তাঁদের এই গবেষণার জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসেবে দুবাইকেই পছন্দ করেছেন। পাহাড়টি ঠিক কত বড় এবং চওড়া হওয়া ‍উচিত তা নিয়ে এখন চলছে চিন্তা-ভাবনা।

এই প্রকল্পের একজন বিশেষজ্ঞ রলফ ব্রুন্টেজেস দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘এমন একটি পাহাড় তৈরি করা অত সহজ কাজ নয়। আমরা এখনো বিষয়টি শেষ করতে ব্যস্ত আছি। তাই আমরা উচ্চতা, প্রশস্ততা ও জায়গা নিয়ে কাজ করছি। স্থানীয় আবহাওয়াবিদদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।’

খরচ প্রসঙ্গে রলফ বলেন, ‘প্রকল্পটি যদি সরকার মনে করে খুব বেশি ব্যয়বহুল তবে তা আর সামনে আগাতে পারবে না। কিন্তু এর ফলে সুদূর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁরা ধারণাপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরবর্তী ধাপে গেলে কাজটি করবেন প্রকৌশলীরা। তখন দেখা যাবে এটা করা আসলেই সম্ভব কি না।’ তিনি আরো বলেন মানবনির্মিত পর্বত যদি সফলভাবেই মেঘ উৎপাদনে সক্ষম হয় এবং বৃষ্টি নামায়, তাহলে বিশ্বে মরুপ্রবণ অঞ্চলের জন্য এটা মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি বিশ্বে তখন সিলভার আয়োডিনের ব্যবহার বাড়বে। কারণ বিমানে করে মেঘের মধ্যে এই পদার্থ ছড়িয়ে দিলেই বৃষ্টি ঝরবে।

শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

টমেটো

টমেটো আমাদের দেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি, তবে বাংলাদেশে গ্রীস্মকালেও টমেটো সাফল্যজনক ভাবে চাষ করা যায়। আকর্ষনীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে এটি সারাবিশ্বেরই জনপ্রিয় সবজী। এ সবজীতে প্রচুর পরিমানে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

উন্নতমানের ও সুস্থ্য সবল চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। প্রচুর সূর্যালোক, খোলামেলা স্থানে এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে একটু উঁচু করে বীজতলা তৈরী করা উত্তম। নির্দিষ্ট পরিমাপের (২০ গ্রাম) বীজ গজানোর জন্য বীজতলা সাধারণত ৩ মিটার লম্বা এবং ১ মিটার প্রস্থের হয়ে থাকে। তবে বীজের পরিমান বেশী হলে আনুপাতিক হারে বীজতলার প্রস্থ অপরিবর্তিত রেখে দৈর্ঘ্য বাড়ানো যেতে পারে। বীজতলার চারা গোড়া পচা ও ড্যাম্পিং অফ রোগ হতে রক্ষা করার জন্য বীজ বপনের পূর্বে মাটি শোধন করে নিতে হবে। আমাদের দেশে খড়কুটা জ্বালিয়ে সরাসরি তাপ দিয়ে, সৌরতাপে এবং রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগে (প্রতি ১ ভাগ ফরমালডিহাইড এর সাথে ৫০ ভাগ পানি মিশিয়ে প্রতি বর্গমিটারে ১২ লিটার হারে) বীজতলার মাটি শোধন করা যেতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সুস্থ্য সবল চারা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানান্তর করে টমেটো চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রথম বীজতলায় ৫০ গ্রাম বীজ ঘন করে বপন করতে হয়। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় (৪ x ৪ সে.মি দুরত্বে) স্থানান্তর করতে হয়। আগাম চাষের জন্য আগষ্ট মাসেই বীজ বপন করতে হয়। নাবি জাতের টমেটো চাষের জন্য নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । প্রতি হেক্টর জমির জন্য ১৫০-১৭৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।



জলবায়ু ও মাটি

শীতকালীন টমেটোর ফল ধারণের জন্য সাধারণত দিনে ২০-২৫ ডিগ্রী সে. এবং রাতে ১০-১৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্র প্রয়োজন হয়। তবে ৩০ ডিগ্রী সে. এর উপরে এবং ১০ ডিগ্রী সে. নীচের তাপমাত্র শীতকালীন টমেটো চাষ বিরুপ প্রভাব ফেলে। রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রী সে. উপরে হলে ফল ধারণ কমে যায় এবং ফলের আকার ছোট হয়ে যায়। টমেটোর জন্য প্রচুর সূর্যালোক প্রয়োজন, মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে ফল ধারণে বাধার সৃষ্টি হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই টমেটোর চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি বেশী উপযোগী। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে টমেটো চাষাবাদ হয়। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদের জন্য উঁচু, সুনিষ্কাশিত, বেলে দো-আঁশ অথবা দো-আঁশ মাটি উত্তম।

জমি তৈরি

শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বর্ষার পর জমিতে জো আসলে ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। এক মিটার প্রস্থ দুই বেডের মাঝে ৩০ সে.মি সেচ নালা রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ২০-২৫ সে.মি. উচু এবং ২৩০ সে.মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হয় । বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে দুই বেডের মাঝে ৩০ সে. মি. চওড়া নালা রাখতে হয়।


গ্রীষ্মকালীণ টমেটোর চাষ

এক্ষেত্রে বিশেষ চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। মাটির প্রকৃতি, স্থান এবং রোপণকাল ভেদে ২০-২৫ সে.মি. উঁচু এবং ১২০ সে.মি. চওড়া বেড করে চারা লাগাতে হয়। মে থেকে জুলাই মাসে বেডে চারা উৎপাদন করতে হয়। জুন থেকে আগষ্ট মাসে চারা জমিতে রোপন করতে হয়। রোপনের ২ মাস পরে ফল সংগ্রহ করা যায়। পাশাপাশি ২টি বেডের জন্য নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ১টি ছাউনি দিতে হবে। এই মৌসুমে টমেটো উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগের ও বেশী সাফল্য নির্ভর করে টমেটো গাছে পলিথিন ছাউনি দেয়ার উপর। ছাউনির খুটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সে.মি. এবং মাঝখানের খুটির উচ্চতা ২১০ সে.মি হয়ে থাকে। দুটি ছাউনির মাঝে অন্তত ৭৫ সে.মি চওড়া নালা রাখতে হবে। যাতে করে ছাউনি থেকে নির্গত বৃষ্টির পানি নিস্কাশনসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। গ্রীস্মকালীন টমেটো গাছে প্রচুর ফুল ধরে তবে উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিবৃষ্টি পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়।

চারা রোপণ

বীজ বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে মাঠের চারা রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দুরত্ব ৬০ সে. মি. এবং চারা থেকে চারার দুরত্ব ৪০ সে. মি. রাখতে হবে। শীত মৌসুমে চাষের জন্য নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।



অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

টমেটোর ভাল ফলন পেতে এবং গাছকে নুয়ে পড়া ও ফল পচন হতে রক্ষার জন্য “ উল্টা- ভি ” ঠেকনা দেয়া প্রয়োজন। সাধারণত বাঁশের বা ধঞ্চার কাঠি এ ক্ষেত্রে খুটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। টমেটোর গাছ যাতে অত্যাধিক ঝোপালো না হয় সেজন্য অঙ্গ ছাঁটাই করা প্রয়োজন। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি সার প্রয়োগের আগে পার্শ্বকুশি ও মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনমত নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার ও মাটির উপরিভাগ আলগা করে দিতে হয়। টমেটো চাষের জন্য ৪-৫ বার সেচের প্রয়োজন হয়। মাটির প্রকার ভেদে ১৫-২০ দিন অন্তর সেচ দেয়া দরকার। চারা লাগানোর ৩-৪ দিন পর হালকা সেচ এবং পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন।


ফল সংগ্রহ

জাতভেদে চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ শুরু হয়। প্রতি গাছ থেকে ৭-৮ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের নীচের দিকে একটু লালচে ভাব দেখা দিলে ফল তোলার উপযোগী হয়।

ফলন
ফলন জাতভেদে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতসমূহ শীতকালে ৪৫ - ১০৫ মে.টন/হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালে ২০-৫০ মে.টন/হেক্টর ফলন দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও হাইব্রিড জাতসমূহ উচ্চ ফলন দিয়ে থাকে।


রোগবালাই

বীজতলায় সাধারনত ’ড্যাম্পিং অফ’ ও আশুধ্বসা’ রোগের আক্রমন হয়। ড্যাম্পিং অফ একটি ছত্রাক জাতীয় রোগ। এ রোগে আক্রান্ত অংকুরিত চারার রঙ ফ্যাকাসে সবুজ হয় ও কান্ডের নীচের দিকে গাছের গোড়া বরারব বাদামী রঙের পানি ভেজা দাগ পড়ে। আক্রান্ত চারার গোড়া পচে চারা মারা যায়।

আশুধ্বসা রোগ হলে আক্রান্ত পাতার উপর কালো কিংবা বাদামী রঙের বৃত্তাকার দানা পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে শেষ পর্যন্ত ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। পুস্প মঞ্জুরীর বোঁটা আক্রান্ত হলে ফুল ও অপরিপক্ক ফল ঝরে পড়ে।


ড্যাম্পিং অফ রোগের জন্য ডাইথেন এম-৪৫ অথবা একরোবেট এম জেড (২ গ্রাম/লিটার) অথবা রোভরাল (২ গ্রাম/লিটার) অথবা রিডোমিল এম জেড ৭২ (২ গ্রাম/লিটার) এবং আশুধ্বসা রোগের জন্য একরোবেট এম জেড বা রোভরাল (২ গ্রাম/লিটার) পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোগ সহনশীল জাত হিসেবে বারির অনুমোদিত জাতগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

নাবীধ্বসা রোগ হলে আক্রান্ত পাতার উপর কালো রঙের পোড়া দাগ দেখা যায়। প্রথমে পাতার কিনারা হতে হালকা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে বাদামী বা ঝলসানো/পোড়া রং ধারন করে। অনেক সময় পাতার কিনারা কুকরিয়ে যায়। গাছের কান্ড ও ফলেও আক্রমনের লক্ষণ দেখা যায়। ফল ও কান্ডের উপরে কালচে বাদামী রঙের দাগ দেখা যায়। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে জমির সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হতে পারে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, অতিমাত্রায় ঘন কুয়াশা এবং মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সারের প্রয়োগ এ রোগ সংক্রমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

নাবীধ্বসা রোগ দমনের জন্য ডাইথেন এম-৪৫ অথবা একরোবেট এম জেড / রোভরাল /রিডোমিল এম জেড যে কোন একটি ছত্রাক নাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোগ সহনশীল জাত হিসেবে বারির অনুমোদিত জাতগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

টমেটো গাছে পাতায় দাগপড়া রোগ দেখা যায়। বেভিস্টিন নামক ছত্রাকনাশক (১ গ্রাম/লিটার) পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা সম্ভব।

পোকামাকড়

টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ন পোকা। এ পোকার কীড়া প্রথমে পাতা ফুল ইত্যাদি খায় এবং পরে ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে ফলের শাঁস খাওয়া শুরু করে। ফলে শাঁস নষ্ট হয় এবং পচন ধরে। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মি.লি. ডেসিস ২.৫ইসি/রিপকর্ড মিশিয়ে ছিটাতে হবে।

টমেটো গাছে সাদা মাছি পোকার আক্রমন হতে দেখা যায়। এ পোকা খুব ছোট এবং পাতার নিচের দিকে থাকে বলে সহজে চোখে পড়ে না। পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগের বাহক হিসেবে এ পোকা কাজ করে। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে যে কোন ডিটারজেন্ট পাউডার (গুড়া সাবান) মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হলে ম্যালাথিয়ন / সুমিথিয়ন (২মি.লি/লিটার) পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা যেতে পারে। প্রয়োজনে প্রথম স্প্রের ১৫ দিন পর দ্বিতীয় স্প্রে করতে হয়।

বর্তমানে আমাদের দেশে উদ্ভাবিত ও আমদানীকৃত বেশকিছু শীতকালীন ও গ্রীস্মকালীন জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৬ (চৈতী), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা) ইত্যাদি জাতগুলো শীত মৌসুমে এবং বারি টমেটো-৪,৫, ৬ এবং বারি টমেটো-৯ (লালিমা), গ্রীস্ম মৌসুমে চাষ করা যায়। বারি টমেটো-৬ (চৈতী) জাতটি উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। এছাড়া শীতকালে চাষযোগ্য অন্যান্য জনপ্রিয় জাত হলো সুপ্রীম সীড কোম্পানীর হাইব্রিড টমেটো এস্ট্রা, হাইব্রিড টমেটো নোভা, ব্রাক সীড এন্টারপ্রাইজের হাইব্রিড জাত তৃপ্তি,নামধারী মালিক সীডস্ এর (রোমা,সুরক্ষা,),ইস্পাহানী সীডস্ এর রতন,ম্যাগস ইকো আর্থ লিমিটেডের(মী রেড রোজ,মী রেড প্রিন্স), এ.আর.মালিক এ্যান্ড কোং (প্রাঃ) লিঃ এর (জেসিকা, ইপক,ডায়নামো,রেডহিট), হাইটম, রুপালি ইত্যাদি।

একনজরে তথ্যসূত্রঃ
১। কৃষি প্রযুক্তি হাত বই।
২। আধুনি উপায়ে মসলা, শাকসব্জী ও ফল উৎপাদন।
৩। ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত তথ্য।

ছাদ বাগান

ছাদ বাগান করে সফলজনদের কথা। দেখুন সরাসরি নিচের ওয়াচ বাটনগুলোতে ক্লিক করে।

1.শীতল ছাদ বাগান




2.এহতেসামুল হক এর ছাদ বাগান-



3.মো: হোসেন এর শখের বাগান



4. লায়লা আহমেদ এর ছাদ বাগান


শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

পেঁপেে

পেঁপেে একদিকে সারাবিশ্বে ফল হিসাবে এবং অন্যদিকে 12 মাসি সবজি হিসাবে স্বাদে গন্ধে ও গুনে অতুলনীয়। পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধি গুনসম্পন্ন। আমাদের দেশে বর্ষা ও শীতের আগমুহুর্তে যখন বাজারে সবজীর ঘাটতি দেখা যায় তখন পেঁপেে প্রতিদিনের সবজি হিসেবে আমাদের চাহিদা মেটায়। আমাদের দেশে রাজশাহী , পাবনা, রংপুর, নাটোর, নরসিংদী, খুলনা ও যশোরে বেশি পেঁপে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার টন কিন্তু তা আমাদের চাহিদার মাত্র ১/৫ অংশ পূরণ করে।তুলনামুলকভাবে পাকা পেঁপে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পুষ্টিমানের দিক থেকে উন্নত। আমের পরই ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ এর প্রধান উৎস হল পাকা পেঁপে। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবন প্রচুর পরিমানে থাকে। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামন হজমকারী দ্রব্য থাকে যা রোগীর পথ্য। কাঁচা পেঁপেতে বেশি আয়রন থাকে।কবিরাজগন হজমি ঔষধ তৈরিতে পেঁপেে ব্যাবহার করে থাকেন। পেঁপে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার যেমন হালুয়া, পায়েশ, চাটনি, আচার, স্যুপ ও সালাদ ইত্যাদি তৈরী করা যায়।

আমাদের দেশে পেঁপেে চাষ বর্তমানে একটি লাভজনক ব্যাবসা । গ্রামান্চলে এবং শহরে অনেকেই এখন এই ব্যাবসা করে সফল হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তাছাড়া পেঁপেে সারা বছরেই লাগানো যায় এবং কম সময়ে অধিক ফলন দেয় বলে সকলের কাছে হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়।

বংশ বিস্তার

সারা বিশ্বে পেঁপের বংশবিস্তার বীজ দ্বারাই হয়। বীজের গায়ে যে পিচ্ছিল পদার্থ থাকে তা অঙ্কুরোদগম রোধ করে। সুতরাং পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে পাটের বস্তার উপর ঘষে পানিতে ধুয়ে নিলে পিচ্ছিল পদার্থ চলে যায়। এর পরপরই বীজ রোপণ করলে দু’সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ পরিষ্কার করার পর ভালভাবে শুকিয়ে নিচ্ছিদ্র পাত্রে (যাতে বাতাস ঢুকতে পারে না) সংরক্ষণ করলে অনেক বছর ধরে বীজ ভাল থাকে। সংরক্ষণ করা বীজের অংকুরোদগম হতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় নেয়। বীজতলায় বীজ না ফেলে সরাসরি ছোট ছোট পলিব্যাগে ও রোপণ করা হয়। প্রতি পলিব্যাগে ৪-৫ টি বীজ ফেলা হয় এবং বীজ গজানোর পর ৩ টি চারাকে বাড়তে দিতে হয়। বীজ তলায় চারা উৎপাদনের বেলায় ১০-১৫ সে.মি উঁচু ১ x ৩ মি. আকারের বীজতলা তৈরী করতে হয়। বীজ তলার মাটির মিশ্রণ হবে এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার, এক-তৃতীয়াংশ বালি এবং এক-তৃতীয়াংশ মাটি। এর সাথে ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার মিশালে ভাল হয়। এরকম বীজতলায় ১ সে.মি মাটির গভীরে বীজ ফেলার পর ঝরনা দিয়ে পানি দিতে হয়। চারা না গজানো পর্যন্ত বীজতলা ১৫ সে.মি উঁচু করে খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া ভাল। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ বপনের পর ৫০-৬০ দিনের বয়সের চারা জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত জুন - জুলাই এবং অক্টোবর - নভেম্বর মাস পেঁপের চারা উৎপাদন সময়। এক হেক্টর জমিতে রোপণের জন্য প্রায় ২০০ গ্রামে বীজের প্রয়োজন হয়।


চারা রোপণ পদ্ধতি

পেঁপের জন্য প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন। এ জন্য ২ x ২ মি. দূরত্বে কাঠি পুঁতে রোপণের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৬০ x ৬০ সে.মি আকারের ৬০ সে.মি গভীর গর্ত তৈরি করে গর্তে সার ও মাটি মিশিয়ে চারা রোপণের উপযুক্ত করতে হবে। প্রতি গর্তে তিনটি করে চারা ২০ সে. মি দূরত্বে ত্রিভুজাকারে রোপণ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৭৫০০ টি চারার প্রয়োজন।

জলবায়ু ও মাটি

উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পেঁপে ভাল জন্মে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পেঁপে সর্বত্রই লাভজনক ভাবে চাষ করা যেতে পারে। পানি দাঁড়াতে পারেনা এমন উর্বর জমি পেঁপের জন্য নির্বাচন করে নিলে ভাল হয়।
জমি তৈরি
জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে সমতল করতে হবে ও পানি সরে যাওয়ার জন্য নালা রাখতে হবে যাতে করে জমি সুনিস্কাশিত হয়।

রোগ ও প্রতিকার

কান্ড পঁচা রোগ
এ রোগ হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের ভেজা দাগের সৃষ্টি হয় এর ফলে আক্রান- চারা গাছ ঢলে পড়ে এবং মরে যায়।
প্রতিকার:
১। আক্রান্ত চারা গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। রিডোমিল এমজেড-৭২ ০.২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।
মোজাইক রোগ
এ রোগ হলে আক্রান্ত গাছের পাতায় সবুজ ও হলুদ রংয়ের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির ও আকারে ছোট হয়। জাব পোকা এ রোগ ছড়িয়ে থাকে।
প্রতিকার:
১। আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। বাহক পোকা দমনের জন্য মেলাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি হারে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর পর ষেপ্র করতে হবে।
৩। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছ প্রতি ১৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করলে এ সমস্যা দুরীভূত হয়।
এ্যানথ্রাকনোজ
ফলের বোটার দিকে গোলাকার দাগ দেখা যায় যা কালো হয়ে পচন ধরে। ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ষেপ্র করে এ রোগ দমনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
রোপণ সময়
বছরের যে কোন সময় পেঁপে রোপণ করা যায় অথবা সেচের সুবিধা থাকলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অথবা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসে রোপণ করা যায়। নচেৎ মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হলে মে মাসে রোপণ করা উত্তম।

অন্তর্বর্তী কালীন পরিচর্যা

পেঁপে বাগান আগাছামুক্ত রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দিতে হয়। মাটি মাঝে মাঝে হালকা কুপিয়ে দেয়া ভাল। এ সময় প্রতি গর্তে একটি করে স্ত্রী গাছ রেখে আর সব গাছ সে স্ত্রী হোক বা পুরুষ হোক তুলে ফেলতে হবে। তবে প্রতি ২০টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখতে হয় যাতে পরাগায়ণে সুবিধা হয়।

পেঁপে চাষ বর্তমানে লাভজনক ব্যাবসা। আপনি চাইলে অনায়াসেই নিজের ছাদে বা বাড়ির পরিত্যাক্ত জায়গায় পেপে চারা লাগিয়ে যেমন পরিবারের সবজির চাহিদা মেটাতে পারেন তেমনি গড়েতুলতে পারেন বার্তি আয়ের একটি উৎস।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬